বুলগেরিয়ার সোনা ছড়ানো সমাধিক্ষেত্র

বুলগেরিয়ার সমাধিক্ষেত্র
(Bulgaria's Varna Gold Treasure) বুলগেরিয়ার সমাধিক্ষেত্রে সোনা উদ্বার 
 

    বুলগেরিয়ায় একটি সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কারের পর ইতিহাসবিদদের চোখ কপালে উঠেছে এই সমাজ এই সমাধি ক্ষেত্রের চেয়ে পুরনো সমাধিক্ষেত্র পৃথিবীতে আর বেশি নেই এই সময় এই সমাধিক্ষেত্র কে ভরনার নেক্রপলিশ সমাধি ক্ষেত্র বলে অভিহিত করা হয়। এই সমাধি ক্ষেত্রেটি ৬ হাজারেরও বেশি বছর আগের। এই সমাধিক্ষেত্রে এত সোনা পাওয়া যায়, যা দেখে ইতিহাসবিদদের চোখ কপালে উঠেছিল। সমাজের শ্রেণী বৈষম্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে ছিল এই সমাধিক্ষেত্র, বেশি হতভাগ করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদদের।

    প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মনে করেন এই সমাধিক্ষেত্র প্রাচীন ইউরোপের সভ্যতার নিদর্শন। এই সমাধিক্ষেত্রটি তাম্রযুগে বন্যার বুকে ঘরে ওঠা কোন এক সভ্যতার মানুষদের সমাধি দেওয়া হয়েছিল এখানে। মনে করা হয় ৬০০০ থেকে ৬৫০০ বছর আগে পৃথিবীর বুকে ছিল এই সমাধিক্ষেত্র। বুলগেরিয়ার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জানিয়েছে এই সমাধিক্ষেত্র থেকে ৩০০০ সোনার জিনিস উদ্ধার হয়েছে এবং ২৯৩ টি সমাধি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সব সমাধি থেকে কিন্তু সোনা উদ্ধার করা হয়নি। ২৯৬ টি সমাধির মধ্যে ৪৩ নম্বর সমাধিটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সবথেকে বেশি সোনা মিলেছিল সেখানে। মনে করা হয় কোন দলনেতা বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি সেখানে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু সমাধি ছিল একেবারেই পুরনো ছাপোসা। এত বছর আগে পৃথিবীর বুকে যে সোনার ব্যবহার ছিল তা ভেবেই অবাক হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা! অনেকেই মনে করেন এই সভ্যতার মানুষের এই পৃথিবীতে প্রথম সোনার ব্যবহার করতেন। যদিও এই নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এই সমাধিক্ষেত্রটি ১৯৭২ সালে আবিষ্কার করা হয়েছে বলা হয় অদ্ভুত ভাবে এই সমাধি ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করা হয়েছে।


যেভাবে সমাধিক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয়।

    এই সমাধি ক্ষেত্রটি ফুটেছিলেন তার বয়স ছিল তখন ২২ বছর, তার নাম রেকো। মাটি কাটতে গিয়ে বেশ কিছু শিল্প-সামগ্রী দেখতে পান দেখুন সেগুলো জুতোর বাক্সে ভরে বাড়ি নিয়ে চলে যান। কয়েকদিন পর তার কিছু একটা খটকা লাগে। আর তাই এই জিনিসগুলি দিয়ে তিনি প্রত্নতত্ত্বকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাদের জানান কিভাবে সে তিনি কিভাবে সেগুলো পেয়েছেন। এরপরেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অনুসন্ধান শুরু করে। খোঁজ মেলে ২৯৪ টি কবরের। সেগুলি কত বছরের পুরনো জানতে রেডিও কার্বন ডেটিং করানো হয়। জানা যায় খ্রিস্ট জন্মের 4560 থেকে 4450 বছর আগে ওই কবরের সমাধিস্থ করা হয়েছিল। অনেকে মনে করেন সেগুলি ৬৫০০ বছরেরও পুরনো। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন এইসব সমাধি ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন নব্য প্রস্তর যুগে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আজ যেখানে বুলগারিয়া সম্ভবত সেখানেই ছিল এই সভ্যতা। সংলগ্ন বলকান অঞ্চল, নিম্নদানি উপত্যকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সভ্যতা। এই সমাধি ক্ষেত্র থেকে সোনা ছাড়াও আরো কিছু জিনিস পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা যা থেকে তাদের মনে হয় যে সুদূর কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল এই সভ্যতার। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন সে অঞ্চলে নব্য প্রস্তর যুগের সেই সভ্যতায় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো স্পন্ডিলাস। সে কারণেই সেসব রাখা থাকতো সমাধিতে। তারা ভাবতো মৃত্যুর পরও রয়েছে জীবন। সেই জীবন জীবনে ব্যবহারের জন্য সমাধিতে দিয়ে রাখা হতো সোনা মুদ্রা।


সমাধিক্ষেত্রে যা পাওয়া যায়ঃ-
    এই সমাধিক্ষেত্র থেকে মোট তিন হাজার সোনার জিনিস মিলেছে সেগুলোর ওজন প্রায় সাড়ে ছয় কেজি। ২৯৬ টি সমাধির মধ্যে সবথেকে আকর্ষক ৪৩ নম্বর সমাধিটি।1974 সালে এই সমাধি আবিষ্কার করা হয়। মনে করা হয় 40 থেকে 45 বছর বয়সী কোনো পুরুষকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল এখানে। তার উচ্চতা ছিল 5ফিট 6 ইঞ্চি থেকে ছয় ফুট আট ইঞ্চি। ৪৩ নম্বর সমাধি থেকে প্রায় দেড় কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে । ১০ টি বড় বড় সোনার পাত, আংটি, বালা, গলার দুটি হার সহ আরো কিছু সোনার জিনিস। সাথে একটি পাথরও একটি তামার কোঠার উদ্ধার করা হয়েছিল যা সোনা দিয়ে বাজানো ছিল। এসব দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা ৪৩ নম্বর সমাধি টি কোন সম্রাট বা দলপতি। এই সমাধিক্ষেত্রে এক ও চার এবং পাঁচ নম্বর সমাধিতে অনেক দামি সোনা গহনাও পাওয়া যায়। এসব সমাধি দেখে ইতিহাসবিদদের ধারণা হাজার হাজার বছর আগের সেই সভ্যতাতেও শ্রেণী বৈষম্য ছিল। এর আগে কোন সভ্যতা এভাবে শ্রেণী বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠেনি।


যেভাবে সমাধিক্ষেত্রটি ধ্বংশ হয়ঃ-
    প্রশ্ন থেকে যায় এই সভ্যতা কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল। মনে করা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। সেই জন্যই মানুষ পূর্ব থেকে ক্রমে পশ্চিমে এগিয়েছিল স্থানীয় জনজাতিদের উপদ্রবের কারণেও অনেকে ঘরবাড়ি চেটে পশ্চিমমুখী হয়েছিলেন তারপর পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল সভ্যতা আর সমাধি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post