“একবার বিদায় দাও মা ঘুরে আসি” যাকে নিয়ে এই গান সেই ক্ষুদিরাম, অনেকের কাছে চেনা ও অচেনা একটি নাম। কালের বিবর্তনে হারিয়ে
যাচ্ছে ইতিহাস। আধুনিক সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় চাপা পড়ে যাচ্ছে এসব
বিপ্লবীদের নাম। ব্রিটিশ উপনিবেশ বিরোধী ক্ষুদিরামের ফাঁসি নিয়ে অনেক গান
কবিতা গল্প রচিত হয়েছে। তার কিছু সংক্ষিপ্ত পরিচয় উইকিপিড়া হতে সংগৃহীত তথ্যঃ-
ক্ষুদিরাম বসু (
ইংরেজি: Khudiram Bose)
(৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ - ১১ আগস্ট ১৯০৮) ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুর
দিকের সর্বকনিষ্ঠ এক বিপ্লবী। ফাঁসি মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭
মাস ১১ দিন।
প্রারম্ভিক জীবন
ক্ষুদিরাম বসু ডিসেম্বর ১৮৮৯ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর জেলা শহরের কাছাকাছি কেশপুর
থানার অন্তর্গত মোহবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলকানাথ বসু
ছিলেন নাড়াজোল প্রদেশের শহরে আয় এজেন্ট। তার মা লক্ষীপ্রিয় দেবী। তিন
কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র আগেই মৃত্যুবরণ
করেন। অপর পূত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার
পুত্রকে তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের (শস্যের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি
করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা
হয়। ক্ষুদিরাম বসু পরবর্তিতে তার বড় বোনের কাছেই বড় হন।
মেদিনীপুর আগমন
ক্ষুদিরাম বসু তার প্রাপ্তবয়সে পৌঁছানোর অনেক আগেই একজন ডানপিটে,
বাউণ্ডুলে, রোমাঞ্চপ্রিয় হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। ১৯০২-০৩ খ্রিস্টাব্দ
কালে যখন বিপ্লবী নেতা
শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর
ভ্রমণ করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী দলগুলোর সাথে গোপন
পরিকল্পনা করেন, তখন তরুণ ছাত্র ক্ষুদিরাম বিপ্লবে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত হন।
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অম্রিতার সাথে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।
শিক্ষাজীবন
ক্ষুদিরাম বসু তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে তিনি শিক্ষালাভ করেন।
বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড
মেদিনীপুরে তাঁর বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ সালে
জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিলো। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু
ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের
দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর
জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। বীর ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের
সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তাঁরই নির্দেশে
"সোনার বাংলা" শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬
সালে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান।[১]
উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রামে যোগ
ক্ষুদিরাম বসু তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর নিকট হতে এবং
শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে
যোগ দেন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম পুলিশ স্টেশনের কাছে বোমা পুঁতে রাখেন
এবং ইংরেজ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেন। একের পর এক বোমা হামলার দায়ে ৩ বছর
পর তাকে আটক করা হয়। ৩০ এপ্রিল ১৯০৮-এ মুজাফফরপুর,
বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছুড়ে তিনজনকে
হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১ মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা
নামে পরিচিত হয়। বিচারক ছিলেন জনৈক বৃটিশ মি. কর্নডফ এবং দুইজন ভারতীয়,
লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা
যায়। তার বয়স খুব কম ছিল। বিচারক কর্নডফ তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে যে
ফাসিতে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে কিনা? ক্ষুদিরাম আবার মুচকে হাসলে বিচারক
আবার প্রশ্নটি করেন। ক্ষুদিরাম তখন ওপরে উদ্ধৃত কথাটি বলেন। তার মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করা হয় ভোর ছয় টায়। ফাসির মঞ্চ ওঠার সময়ে তিনি হাসিখুশি
ছিলেন। ক্ষুদিরামকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখেছিলেন এবং অনেক গানও
তখন রচিত হয়েছিল। যেমন, একবার বিদায় দে মা। তার মৃত্যুর পর বৃটিশদের খুন
করার জন্য তরুণরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে
হেমচন্দ্র কানুনগো
লিখেছেন যে ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিলো প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ
করে দুঃসাধ্য কাজ করবার।তাঁর স্বভাবে নেশার মতো অত্যন্ত প্রবল ছিলো সৎসাহস।
আর তাঁর ছিলো অন্যায় অত্যাচারের তীব্র অনুভূতি। সেই অনুভূতির পরিণতি
বক্তৃতায় ছিলো না বৃথা আস্ফালনেও ছিলো না; অসহ্য দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ,
এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে, প্রতিকার অসম্ভব জেনেও শুধু সেই অনুভূতির জ্বালা
নিবারণের জন্য, নিজ হাতে অন্যায়ের প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে প্রতিবিধানের
চেষ্টা করবার ঐকান্তিক প্রবৃত্তি ও সৎসাহস ক্ষুদিরাম চরিত্রের প্রধান
বৈশিষ্ট্য।