বিশ্বের বড় কয়েকটি পাখির বাসা

ছোট্ট বাবুই পাখির বাসা যখন পুরো পরিবার থাকার মত কুড়ে ঘরের চেয়েও বড় !

bird-social-weaver-in-tree-2-1024x768

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখির বাসা তৈরি করেছিলো ন্যাড়া মাথার দুটি ঈগল। বাসাটির ওজন দুই টনেরও বেশি। পাখি দুইটির বাসার আয়তন প্রস্থে ৯ফুট ৬ ইঞ্চি আর গভীরতা ২০ ফুট।
আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যর সেন্টপিটসবার্গে এ বাসার সন্ধান পাওয়া গেছে। গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছিলো  বাসাটি। ১৯৬৩ সালে এ বাসার সন্ধান পাওয়া যায়।
এছাড়া সোনালী ঈগলও প্রচুর পরিমাণে বড় বাসা তৈরি করে থাকে। এরমধ্যে ১৯৫৪ সালে স্কটল্যান্ডে এমন একটি বাসার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যার গভীরতা ছিল ১৫ফুট।
বাসা বানানো পাখির সংখ্যাই বেশি। আর পাখির সেসব বাসা যেমন বৈচিত্রময় তেমনি বিচিত্র তাদের বাসা বানানোর ধরনে। কিছু পাখি বাসা বানানোর জিনিসপত্র কেবল একটার উপর আরেকটা রেখেই একটা বাসা বানিয়ে ফেলে। কোনোরকম বাসা। আবার কিছু পাখি রীতিমতো ঠোঁট দুটোকে সুঁইয়ের মতো কাজে লাগিয়ে চিকন চিকন আঁশ দিয়ে বাসা বানায়। যেমন আমাদের দেশের বাবুইপাখি। এজন্য বাবুইয়ের নামই হয়ে গেছে শিল্পীপাখি।
bird-social-weaversomoyerkonthosor211
বড় পাখিদের বাসা দেখতে আহামরি তেমন একটা সুন্দর হয় না। বিশেষ করে শিকারি পাখিদের বাসা। হয়ত শিকারের পিছনে ছুটতে ছুটতে বাসা বানানোর দিকে অতটা নজর দিতে পারে না ওরা। ঈগল, শকুন, কাক, চিল, বাজ- এসব পাখির বাসা কোনোরকম। অগোছালো। কোনোরকমে কিছু শুকনো ডালপালা, খড়, শুকনো পাতা- এসব জোগাড় করে গোলাকার বাসা বানায়। পাখির আকার অনুযায়ী এদের বাসার আকার বেশ ছোট। কোনোরকম ঝামেলা না হলে এরা বাসা বদলায় না। যখন ডিম পাড়ার সময় হয় এরা পুরনো বাসাকেই ঠিকঠাক করে নেয়। এদের বাসা বানাতে সময়ও লাগে কম। সাধারণত উঁচু গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালই এরা বাসা বানানোর জায়গা হিসেবে নির্ধারণ করে। এদের বাসা অতটা মজবুত হয় না। যে কারণে অনেক সময় দেখা যায় প্রচণ্ড ঝড়ের পরে এদের বাসা ভেঙে পড়ে বা পুরো বাসাটাই নিচে পড়ে যায়। –
এত গেল ছোট আকারের পাখির বাসা নিয়ে গল্প , এসব সচরাচর আমরা দেখেই থাকি । পাখির বাসা নিয়ে যদি মনে মনে ভাবেন মানসপটে কি আসতে পারে,  এক হাত লম্বা বড়জোর দুই হাত নাহয় হতে পারে , তাই বলে কোন পাখির বাসা যখন হয় আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে দেখা আস্ত কোন কুড়েঘরের মত (যেখানে অনায়াসে থাকতে পারে  একটি পুরো পরিবার ) তাহলে কেমন হবে?
প্রথম দফায় একটু হোঁচট লাগতেই পারে এ কথা শোনে । কিন্তু বিচিত্র এই পৃথিবীর কত বিচিত্র সৌন্দর্য কথা যে আমাদের অজানা তাও মানতে হবে আরও এক দফা ।
যে কেউ দেখে প্রথমে থমকে দাঁড়াতে পারেন। খড়ের গাদা আবার গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন পোলে হয় নাকি! চেতনা ফিরবে একটু বাদে। যখন এই গাদার মতো স্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে ছোট ছোট পাখি।
গাছের উপর ২০ ফুট লম্বা, ১৩ ফুট চওড়া বাসা। বলুন তো এ বাসায় কে থাকে? ভাবছেন চিতা বাঘ কিংবা অন্য কোনো জন্তু? না আপনার ধারণা ভুল, এ বাসায় পাখির বাস!
কি আশ্চর্য হলেন? আশ্চর্য হওয়ার মতো আরো ঘটনা মজুত এখনো। শুনুন।
bird-social-weaversomoyerkonthosor21
পাখির এই বাসার ওজন দুই হাজার পাউন্ডেরও বেশি। বাসাটি প্রায় এক শ’ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বাসার উত্তরাধিকার বংশ পরম্পরায় পেয়ে থাকে। মোটা ঘাস, পাখির পালক, বাতাসে ভেসে আসা তুলো, খড়কুটো আর গাছের ডাল দিয়ে নিজেদের বাসা তৈরি করে সোস্যায়েবল ওয়েভার। তবে সমস্যা হল বাসাটি অক্ষুন্ন থাকলেও অনেক সময় মারা যায় আশ্রয়দাতা গাছটি। এমনকি বাসার ভারে ভেঙেও পড়ে।
আশ্চর্য এই পাখির নাম সোস্যায়েবল ওয়েভার। যা আমাদের দেশের বাবুই পাখির মতো। আজব এই পাখির বাস দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। এই অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা যেমন প্রচণ্ড বেশি, রাতে তার উল্টো। এ বাসাই অতিরিক্ত গরম এবং ঠাণ্ডা থেকে সোস্যায়েবল ওয়েভারকে রক্ষা করে।
bird-social-weaversomoyerkonthosor
একটি বাসায় এক শ’র উপরে ছোট ছোট ঘর থাকে। একটি আস্তানায় সাধারণত তিন শ’ থেকে চার শ’ পাখি বাস করে। তবে ছোট ছোট কুঠুরিতে আলাদা আলাদা পরিবার বসবাস করে। বাসার মাঝখানে থাকা ঘরগুলো বেশি উষ্ণ। যা রাতের হিমশীতল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। আর বাইরের ঘরগুলো তুলনামূলকভাবে একটু ঠাণ্ডা। দিনের গরম থেকে রক্ষা পেতে সেই ঘরগুলোতে আশ্রয় নেয় পাখিরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে দেখা মিলে  এমন অবাক দৃশ্যের। খড়ের গাদা নয়, এগুলো পাখির বাসা! চড়ুই সদৃশ নীলচে ঠোঁটের ছোট্ট পাখিটির নাম সোশ্যাল ওয়েভার।
সোশ্যাল ওয়েভার সাধারণত উত্তর কেপ প্রদেশ ও নামিবিয়াতে দেখা যায়। তবে এদের বেশিরভাগই কালাহারি মরু অঞ্চলে থাকে।
কিন্তু এত ছোট পাখির বাড়ি এত বড়! বড় তো হবেই, কারণ এরা নিজের জন্য তো ভাবেই, সঙ্গে মাথায় রাখে ভবিষ্যত প্রজন্মের আশ্রয়ের কথাও। এমনভাবে তারা বাসা তৈরি করে যেনো গোটা গাছটিই সোশ্যাল ওয়েভারের কলোনি।
সাধারণ পাখির বাসা ও সোশ্যাল ওয়েভার পাখির বাসার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য তো রয়েছেই। যে গাছে তারা বাসা বাঁধে সে গাছে অন্য পাখির বাসা তো দূরের কথা অন্যদের বসবারও ঠাঁই হয় না। বেচারা গাছটাও পড়িমরি করে বাসার ভারে।
গাছের সঙ্গে দৈত্যাকার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের মতো বাড়িতে শতাধিক সোশ্যাল ওয়েভার সারাবছর বসবাস করে। কোনো কোনো সোশ্যাল ওয়েভারের বাড়ি একশো বছরেরও বেশি সময় টিকে থাকে!
মুলত শিকারি প্রাণী ও গেছো সাপ থেকে গা বাঁচাতেই গাছে ও পোলের ওপর বাসা বাঁধে এরা। তারপরও বাসায় কখনও হানা দেয় কেপ কোবরা।
এক একটি বাসার উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৩ ফুট ও ব্যাপ্তি প্রায় ২৩ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বাসা তৈরি করে সোশ্যাল ওয়েভার।
ওয়েভার বুদ্ধিমান পাখি এতে কোনো সন্দেহ নেই। আয়েশিও বলা চলে। এদের বাসার ছাদ তৈরি হয় কাঠি ও গাছের শেকড় দিয়ে। ভেতরের কামরাগুলোতে আরামের জন্য রাখা হয় পশম বা তুলাজাতীয় নরম উপকরণ।
তাদের শক্তপোক্ত এই বাড়িতে শীতের রাতের ঠাণ্ডা ও গ্রীষ্মের তাপ প্রবেশ করতে পারে না। তাই কালাহারি মরুভূমির কঠোর আবহাওয়ার মধ্যেও তারা আরামদায়ক জীবন-যাপন করতে পারে। একইসঙ্গে এই পাখিদের আবহাওয়াভেদে বাসা বদলেরও ঝামেলা পোহাতে হয় না।
bird-social-weaversomoyerkonthosor2
মৌচাকের মতো বাসাগুলোর নিচের দিকে এর প্রবেশপথ। প্রতিটি বড় বাসায় মোট তিনশোটির মতো কামরা থাকে। কামরাগুলো চার থেকে ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। প্রতিটির প্রবেশপথ ভিন্ন। সরু প্রবেশপথ গুলো ১০ ইঞ্চি লম্বা ও তিন ইঞ্চি প্রশস্ত।
এক একটি বাসায় পাঁচ থেকে একশো পাখি থাকে। তবে প্রতিটি বাসায় অনায়‍াসে চারশো পাখি থাকতে পারবে।
নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে সোশ্যাল ওয়েভারের শঙ্কা একটাই। যখন এই পাখি ছোট থাকে তখন ৭০ শতাংশ ছানাই সাপের আহারে চলে যায়।
সাধারণত সোশ্যাল ওয়েভারের জীবনসীমা প্রায় ১০ বছর।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post