পশ্চিমবঙ্গের
এক গ্রাম। শারদীয় দুর্গোৎসবে এ গ্রামে বাজে না ঢাক। কারণ এ গ্রামে
দুর্গাপূজা হয় না। দুর্গাপূজা কীভাবে হবে? আয়োজন তো করতে হবে। আয়োজন করলেই
তো কেউ না কেউ মারা যায়!
দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে সব এলাকা যখন ব্যস্ত তখন নীরব বর্ধমান জেলার
বাবলা গ্রাম। বর্ধমান শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রাম। বসবাসকারীদের
বেশির ভাগই হিন্দু। কিন্তু এরপরও সেখানে হয় না দুর্গাপূজার আয়োজন, বাজে না
পূজার বাজনা-বাদ্যি।গোটা গ্রামে আজ কার্যত নিষিদ্ধ দুর্গাপূজা। গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, আগে এ গ্রামে দুর্গাপূজা হতো। কিন্ত পরপর দুই বছরই পূজায় অষ্টমীর দিনে দুই দুটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় দুর্গাপূজা। আজ থেকে ১৫ বছর আগে আবার গ্রামের কিছু যুবক দুর্গাপূজা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত সেইবারও অষ্টমীর দিন ঘটে একই দুর্ঘটনা।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছে, আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে গলসির আদরাহাটি গ্রামের সেন পরিবার বাবলা গ্রামে বাস করতে চলে আসে। আদরাহাটিতে ওই পরিবার খুব ঘটা করে দুর্গাপূজা করত। বাবলা গ্রামে চলে আসার পর সেখানেও জমজমাট করে করতে থাকে পূজার উৎসব।
জানা যায়, বাবলা গ্রামে সেন পরিবারের আয়োজনে করা প্রথম দুর্গাপূজাতেই অষ্টমীর দিন ওই পরিবারের কর্তাব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরের বছর ওই সেন পরিবারের জামাই ফের ওই দুর্গাপূজা করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেইবারও অষ্টমীর দিন মারা যান স্বয়ং ওই জামাই। ফলে পর পর দুই বছর একই দিনে দুই দুর্ঘটনার পর থেকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায় ওই গ্রামে দুর্গাপূজা।
আজ স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, এই বাবলা গ্রামে দুর্গাপূজা মানেই কারো না কারো মৃত্যু অনিবার্য। দুর্গাপূজা মানেই বাবলা গ্রামে অভিশাপ— এমনটাই বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে গ্রামবাসীর মনে।
সেন পরিবারের ওই ঘটনার পর কেটে যায় বহু বছর। তারপর আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই গ্রামের কিছু যুবক আগের ঘটনাগুলোকে দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করে। কিন্ত সেইবারও অষ্টমী পূজার দিন ঘটে যায় আবার দুর্ঘটনা। অষ্টমীর দিন বাবলা গ্রামের পাশের ইরকোনা গ্রামে পদ্মফুল তুলতে গিয়ে মারা যান দুর্গাপূজার উদ্যোক্তাদের একজন সাগর সেন। অথচ যে পদ্মপুকুরে তিনি ডুবে মারা যান স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় সেই পুকুরে কখনই হাঁটু পরিমাণের বেশি পানি থাকে না। অথচ সেই পুকুরে সাগর সেনের ডুবে মরার ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গ্রামের লোকজন। অষ্টমীর দিনেই দুর্গা মাকে বিসর্জন দিতে উদ্যোগী হয় তারা। যদিও সে যাত্রা পুরোহিত অনেক বুঝিয়ে কোনো মতে পূজা উৎসব শেষ করেন। এরপর থেকে এই গ্রামে আর দুর্গাপ্রতিমা ঢোকেনি কখনো। যদিও দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব আচারই পালন করে ওই গ্রামের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা পূজায় অঞ্জলি দিতে যায় পাশের গ্রামে। কিন্তু এই গ্রামে দুর্গাপূজা করার সাহস পায় না কেউই।
গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জন জানা ও সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দুর্গাপূজা মানেই এই গ্রামে কারো না কারো মৃত্যু ঘটবেই। আগের অভিজ্ঞতা সেই রকমই বলছে। যে কারণে আর এই বাবলা গ্রামে দুর্গাপূজা করার সাহস দেখায় না কেউই।’