যেভাবে উদঘাটন হয়েছিল খুলনায় বাবা, মা ও মেয়ে হত্যার রহস্য।

 



উদঘাটনঃ- খুলনার কয়রায় আলোচিত তিন খুনের রহস্য প্রায় আড়াই মাস পর উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রতিবেশী নারীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ার জেরে পরিকল্পিতভাবে প্রথমে স্ত্রী, মেয়েকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর স্বামীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত ঢাকতে হত্যার পর লাশগুলো পাশের পুকুরে ফেলে দেয় খুনিরা। সম্পূর্ণ ক্লু লেস এ হত্যাকান্ডটির মোটিভ বের করতে পুলিশকে টানা আড়াই মাস চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারের একাধিক সংস্থাও ছায়া তদন্ত করেছে। হত্যায় জড়িত দুই নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার দক্ষ এসপি মাহবুব হোসেন, পুলিশের ট্রেনিং এ্যান্ড আইটি শাখার ইনচার্জ অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এজাজ শফি ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতায় আসামিদের ধরার পর এই হত্যা রহস্য উম্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ২৬ অক্টোবর সকালে উপজেলার বামিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও মেয়ে হাবিবা সুলতানা টুনির লাশ বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় নিহত হাবিবুরের মা কোহিনুর খানম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কয়রা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে কয়রা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি উজ্জ্বল কুমার দত্ত আলোচিত মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। পাশাপাশি জেলা পুলিশের ট্রেনিং এ্যান্ড আইটি শাখার ইনচার্জ এজাজ শফি মামলাটির ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখেন।
পূর্বের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এজাজ শফি বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি, সোর্স ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আসামিদের কাছে পৌছাতে সক্ষম হন। তদন্তের স্বার্থে প্রায় এক মাস মাঠ চষে বেড়ানো এই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রশিদ গাজী জানিয়েছেন, একই গ্রামের মো. জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানার পরকীয়া প্রেমে হাবিবুল্লাহ (নিহত) বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুলতানার স্বামী কুদ্দুস গাজী খুলনা শহরে কাঁচা মালের ব্যবসার সুবাদে বাড়িতে কম যাতায়াত করেন। এ সুযোগে জিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। রাজিয়া সুলতানা হাবিুল্লার প্রতিবেশি হওয়ায় তার চোখে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ কারণে তিনি তাদের পরকিয়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। ঘটনার বছর খানেক আগে জিয়াকে হাতেনাতে ধরে ফেলার পর সুলতানা ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবুরকে বটি দিয়ে কোপ দিয়েছিল। পরে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে জিয়াউর হাবিবুল্লার উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় সে হাবিবুরকে শায়েস্তা করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা আটতে থাকে। পরে জিয়াউর ও রশিদের নেতৃত্বে গত ২৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে হাবিবুল্লাহ, তার স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধে। এরপর মা-মেয়েকে ধর্ষণের পর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ছয়জন সরাসরি অংশ নেয়। তিনি আরো জানান, এসপি মাহবুব হাসান এর দিক নির্দেশনা ও বিশেষ ছক অনুসরণ করে খুবই কৌশলে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে আজ সোমবার খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান প্রেসব্রিফিং করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বিকৃত যৌন লালসা, প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে দলবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজিয়া সুলতানা, শামসুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম বাবলু, আল আমিন হোসেন, আসলাম সরদার, আবদুল ওহাব ওরফে হক, তাসলিমা, শামীমুল ইসলাম অঞ্জন, আব্দুর রশিদ গাজী ও মোস্তফা কামাল। হত্যাকান্ডটি ক্লুলেস হওয়ায় তদন্তে কিছুটা সময় লেগেছে। সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে, হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে আমরা সমর্থ হয়েছি।

সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post