জবাইয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে উদ্ধার।

জবাইয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে উদ্ধার।
লোহাগাড়ার আমিরাবাদ বটতলী এম কে আবাসিক হোটেলের ৩০৪ কক্ষ। ছোট্ট কক্ষটিতে জিম্মি হয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাদেক ছোবহান সাকিব। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক হাত বাঁধা হয়েছে। আরেক হাত বাঁধার প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে কক্ষের দরজায় টোকা পড়ে। মুহূর্তেই থমকে যায় খুনি।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর যখন দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা পড়ছিল, তখনই দরজা খুলতে বাধ্য হয় অপহরণকারীদের একজন। ভেতরে প্রবেশ করেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মঈনুল ইসলাম। মঈনুলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাকিব। বেঁচে যাওয়ার আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তার বুকে মাথা রেখেই।
এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একদিকে দীর্ঘ অভিযানের পর ভিকটিমকে উদ্ধারের আনন্দ, অন্যদিকে উদ্ধার ছাত্রের বেঁচে যাওয়ার কান্না। এর সঙ্গে অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারের তাড়া। যদি পালিয়ে যায়!
এমন ঘটনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি করিৎকর্মা পুলিশ কর্মকর্তা মঈনুল ইসলামের বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের কারণে। তিনি দ্রুত অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করলেন। শুরুতেই একা প্রবেশ করেছিলেন রুমে। পরক্ষণে অভিযানকারী দলের অন্য সদস্যদের ডেকে নিয়েছেন ঘটনাস্থলে। এর পর হাতকড়া লাগানো হয় আসামির হাতে। আর ভিকটিমকে নিরাপদে হোটেল কক্ষ থেকে বের করে আনা হয়।
জবাইয়ের আগ মুহূর্তে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সাকিব সাতকানিয়ার করাইয়ানগর গ্রামের ফৌজুল কবীরের ছেলে। পড়েন চন্দনাইশের বিসিজি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঘটনার বিষয়ে সাকিবের চাচা ব্যবসায়ী মো. ফরিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল সাকিব। ভোরে সাকিবকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে একদল অপহরণকারী। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এরপর সাতকানিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে।’
অভিযানের শুরুতেই পুলিশ একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে কাজ শুরু করে। ওই নম্বর থেকে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সাকিবের পরিবার পরবর্তীতে নগর গোয়েন্দা পুলিশেও একই অভিযোগ জানায়। ফলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মঈনুল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয় সাতকানিয়া থানা পুলিশের একটি টিমও।
অভিযানকারী দল কৌশলে অপহরণকারীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এক পর্যায়ে অভিযানকারী দল নিশ্চিত হয় অপহরণের সঙ্গে সাকিবের আপন খালাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম জয় যুক্ত থাকতে পারেন। এর পর পুলিশ অপহরণকারীদের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দেনদরবার করতে থাকে। পাশাপাশি সম্ভাব্য জায়গায় অভিযান অব্যাহত রাখে। এরই মধ্যে অভিযানকারী দল সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার একাধিক পাহাড়ি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরের বাড়িতেও যায় পুলিশ সদস্যরা।
জাহাঙ্গীরের বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার বিষয়টি জেনে যায় সে। তখনই জাহাঙ্গীর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘বাড়িতে পুলিশ গেছে। মজা বুঝবে।’ এরই মধ্যে পুলিশ একটি সূত্র থেকে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ নম্বর পায়। ‘৩০৪ নম্বর’ সূত্র ধরেই গোয়েন্দা পুলিশের দল শনিবার সন্ধ্যায় আমিরাবাদের আবাসিক হোটেলের সন্ধান শুরু করে। কারণ, তখন পুলিশের কাছে হোটেলের নাম জানা ছিল না। এরই মধ্যে সহকারী কমিশনার মঈনুল ইসলাম যান এম কে আবাসিক হোটেলে। সেখানে গিয়েই কাঙ্ক্ষিত ৩০৪ নম্বর কক্ষ থেকে সাকিবকে উদ্ধার করা হয়।
সাকিবকে যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই কক্ষ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, দুটি ধারালো ছুরি, গামছাসহ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় অপহরণকারী দলের সদস্য মো. হোসেন (৩০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার সুখছড়ি গ্রামের মো. জানে আলমের ছেলে। তবে সাকিবের খালাতো ভাই জাহাঙ্গীরসহ তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘আপন খালাতো ভাই সাকিবকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছিল। শেষে পুলিশ সাকিবকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।’
জাহাঙ্গীরের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সহকারী কমিশনার মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অপহরণের সঙ্গে পাঁচজন জড়িত বলে জানিয়েছে ধৃত হোসেন। বাকি চারজনকে ধরতে অভিযান চলছে।’ তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর সাকিবকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোসেন স্বীকার করেছে।’
সূত্রঃ কালের কন্ঠ, 15/01/2019
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post