মোঃ মাইনউদ্দিনঃ
বিদ্যুৎ চলে গেছে.... আকাশে মেঘের গর্জন থাকলেও বর্ষনের নাম মাত্রও নেই। নরম দেহ পেয়ে ঘামেরাও সুযোগে উকি দিচ্ছে। বাহিরে বাতাসের শব্দ শুনতেছি.... জানালাটা একটু খুলে দেই-যদি এতে ঘামেদের দৌড়াতে পারি। পুরো আকাশ আজ অন্ধকারে চেয়ে গেছে। তারা’রা নেই। দুঃসময়ে এমন সবাই ই চলে যায়, এ কথা অনেক শুনেছি-দেখেছি, কিন্তু তা যে প্রকৃতির মাঝে বিদ্যমান তা আজ দেখলাম। হয়ত আগে চোখে পড়েনি, হয়ত অমন করে দেখিনি। মেঘের গর্জনে আর বিজলির আলোর রশ্মির ভয়নাক চিত্র দেখে চাদ নিরুপায় হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির অদ্ভূত দৃশ্য এক অন্যরকম অনুভতি শিহরণ দিচ্ছে। প্রকৃতির দৃশ্য খুব নাড়া দিচ্ছে। খুব ভালও লাগছে দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে। প্রচন্ড ঝড়ের বাতাশে একটা পাখির চেচামেছিও শুনেছিলাম। একা নিরব অসহায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। তাকিয়ে আছি......... পৃথিবীর সবাই হারিয়েগেছে অতল অন্ধকারে জেগে আছি আমি আর দূর আকাশের চাঁদ। আমাকে তো তুমি চাঁদের কাছেই রেখে হারিয়েগেলা। সেদিন থেকে আজও চাঁদের সাথে আছি।
একাকিত্ব দূর করতে তোমার অনুরোধ রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পারলাম না। তোমার মত এখন আর জগতটা নেই। তোমার মত আপন করে ভালবাসা পাওয়ার লোক এই পৃথিবী থেকে ঈশ্বর উঠিয়ে নিয়েছে। কারণ এই জগতে তাদের মূল্য কেউ দেয় না। অযথা মূল্যহীনের চেয়ে হারিয়ে যাওটা ভাল। যেমনটা তুমি বেছে নিয়েছে। তোমার মাঝে নিমগ্ন আর হারিয়ে যাওয়ায় কিছুদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ততদিনে মাথার চুলগুলোও পথ হারার মত। তা দেখে অনেকের মায়া লেগেছে। কিন্তু এই ভিতরটা যে আজ ও হুহু করে কেদে উঠে তার জন্য কারো ভাবনা ও জাগে না। চুলগুলো ঠিক করার একটা মানুষ দরকার সবার..... ছিল সাথে তোমার অনুরোধ তাই রাজি হলাম।
একজন নরম মাংসের প্রাণী খোজা হল যে প্রতিদিন একটু খেয়াল রাখবে। হয়ত সাথে একটু অঘোছালো জীবনকে একটু ঘুছিয়ে দিবে। প্রথম একটু ইন্টারভিউ ছিল। একটি ক্যাফেতে ..... । তোমার চেয়ে অনেক সাদা রংয়ের। হয়ত এ জন্যই সবার চোখে ধরেছে। খুব বাহারি সাজে। ভাবী বলত প্রাণীটি না কি পরীর মত। তোমাকেও জিঙ্গেস করলাম। সম্মতি দিয়েছ। তাই এক নজর তাকালাম। এক ঝলক হাসি। অনার্স পড়ে। ভাল শিক্ষিত আধুনিক, শুনেছি। খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে। অনেক দিন নিঝুম থাকায় হয়ত কথা বলা ভূলে গিয়েছি। ও অনেক কিছু জানতে চেয়েছিল। সব বললাম। অনেক আলাপের মাঝে আমি শুধু একটু জল খেলাম। ও ভালো মিশতে পারে । তুমি হয়ত এতটা হতে পারনি বলে লুকিয়ে চলে গেছ। আপা ও বলল দেখ অনেক ভদ্র প্রাণী। তোর সাথে ভাল মানাবে। ও নামটা... রোধেলা। তুমিতো ভোরের দুর্বায় মুক্তার মত, কিন্তু তার প্রভাবে হারিয়ে গেলে।
আমার প্রতি ওর অনেক কেয়ার। খুব মিষ্টি কথা বলতে পারে। ভাবলাম ব্যর্থ জীবনে নিজের জন্য অন্য একটা জীবনকে অবহেলা করতে পারি না। আমিও তার প্রতি যত্নবান হচ্ছি। আমার প্রতিটা মহুর্তের খোজ ও নেয়। ভালই লাগে। তুমিও এই ফাঁকে হারিয়েগেছ। সামনের তারিখটা ছিল 14 তারিখ। ভাবলাম ওকে সারপ্রাইজ দিব। না বলে 3দিনের ছুটিতে বাড়ি এলাম। আগ থেকে জানতাম ও বাড়ি থাকবে। তাই নাইটে এলাম। ভোরে ভোরে একটি গোলাপ তার হাতে তুলে দিব। পকেটে রেখেছিলাম যত্ন করে। কিন্তু আমি যে সারপ্রাইজ পাব সেটা কে জানত? বাড়ি নেই ওরে কয়েকটা ফোন দিলাম। অনেকক্ষন পর রিসিভ করল। আমি বাড়ি নেই তাই, ঐবাড়ি চলেগেছে। আমি ও বাড়ি আসার খবরটা দিলাম না। ভাল লাগছিল না। তাই ওর সাথে একটু রাগ রাগ থাকতাম। এতে এখন আর আগের মত কেয়ার পাচ্ছি না। ভাবলাম ওকে মাঝ খানে কিছুদিন অবহেলা করায় হয়ত ওর মনটা অন্যরকম হয়ে গেছে। তাই ওর প্রতি আগের চেয়ে বেশি যত্নবান হলাম। মাঝে মাঝে ভালেই উ্ন্নতি হয় আবার তার চেয়ে বেশি অবনতি। ভাবলাম বাড়ি গিয়ে ওকে কিছুটা সময় দিব। অনেক মার্কেট করলাম। ওর পছন্দের জিনিসগুলি কিনতে দামা দামিও করলাম না। এবার ও না বলে বাড়ি এলাম। তবে এবার আর সারপ্রাইজ না। ও শুয়ে ছিল। ঘুমে অাচ্ছন্ন। ভাবলাম চুপ করে শুয়ে থাকব ওর ঘুম ভাঙ্গলে দেখবে আমি। ও অবাক হবে। ওর মোবাইল বালিশের পাশেই সাইলেন্ট ছিল। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল কিন্তু মোবাইলের আলো অনুভব করে চোখ মেললাম। ওর মোবাইলে বোধ হয় টেক্সট আসছে।.... ঠিক তাই। আমার অচেনা নাম্বার। চোখ বড় করে টেক্সটগুলো পড়লাম। টেক্সট পড়ে ওর গ্যালারি দেখার আগ্রহটা বেড়ে গেল। দেখলাম। অনেক কিছুই দেখলাম। আজকের মেঘের অবস্থাটা সেদিন আমার মাঝে এসেছিল। ওর মুখের দিকে আর গ্যালারির দিকে কয়েকবার তাকালাম। ভোর ও হয়ে গেল। প্রকৃতির মত ও চোখ খুলল। অবাক ও হল। আমি ঘুমের ভান করে শুয়েছিলাম। ও জেগে তুলল। জড়িয়ে ও ধরল। অনেকদিন পর কাছে পাওয়ার ব্যকুলতা প্রকাশ করল। কোনরকম ঘুমের কথা বলে আমি চোখ বন্ধ করলাম। ওর চোখে হতাশাটা আমার থেকে লুকাতে পারেনি। সকাল 9টার দিকে ওর সেট টা আবার হাতে নিলাম। রাতের আধারে ওর মোবাইলের অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। বিকেলে ওকে ওদের বাড়ি যাওয়ার কথা বলায় রাজি হল। আমিও নিয়ে গেলাম। সন্ধার দিকে জরুরী একটা অজুহাতে বাড়ি আসলাম রাতেই ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ঐদিন ই ছিল শেষ ফেরা। গেলাম না। কারণ জানতে চাইল। কিছু বললাম। ও অস্বীকার করল, এতটা অস্বীকার যে অবিশ্বাস করা দূরহ ব্যাপার, যদি আমার চোখে কিছু না পড়ত। প্রমাণ চাইল। কিছু প্রমান দিলাম। সব প্রমান দিলাম না। সব প্রকাশ করত নেই।
আজ কাল নাকি মেয়েদের অনেক ছেলে বন্ধু থাকে। কই তোমার তো ছিল না। ওরা তোমার মত নয়। ওর সেটে যাদের দেখলাম তারা নাকি শুধু বন্ধু। আর মেসেজ......... ওটা এমনি মজা করছিল। ঘনিষ্টতা......... ওটা এখনকার যুগে স্বাভাবিক।
........... হয়ত। কিন্তু আমার কাছে অস্বাভাবিক। ওসব ছেলেদেরও সঙ্গীনীর এমন অবস্থা ওরা স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পারবে। কারণ ওদের ওটা স্বাভাবিক। এতে ওদের সমস্যা হবে না। কিন্তু আমার সমস্যা আছে। আমি এসব সহ্য করতে পারিনা। যার কাছে এসব তেমন কিছুনা তাকে সেই পরিবেশেই রাখা দরকার ছিল। তাই তাকে সেই খানে যেতে বললাম। অন্যরা সহ্য করতে পারলেও আমি পারি না। কারণ যে আমার তার আমি ব্যতিত অন্য কারো সাথে যোগাযোগ সহ্য করতে পারি না। হয়ত মন থেকে ভালবাসতে চাই বলে।আর ওর ভালবাসা শুধু মুখে। আমার মত অনেককেই এমন ভালবাসে। আমি সে ভালবাসা চাই যে ভালবাসা পৃথিবীতে শুধু আমার জন্য অন্য কারো জন্য না। যার ভাবনা জুড়ে শুধু আমিই থাকব।
........ আমি তোমার মত কাউকে পাইনি, তোমাকেও তো কত জন লাল গোলাপ দিতে চেয়েছিল। তুমি নাও নি। বন্ধুদের ও ত্যাগ করেছ... পৃথিবীর সব একপাশে আর তুমি ছিলে অন্যপাশে। শুধু আমার জন্য........ তোমাকে ধরে রাখতে পারিনি। তাই চলে গেলে, না ফেরার দেশে।
এই কর্পোরেট যুগে তোমার মত কেউ নেই।
এই কর্পোরেট যুগে তোমার মত কেউ নেই।